গ্রীন টি আর আমরা রেগুলার যে চা খাই দুটাই একই গাছ থেকে তৈরি হয়। গ্রীন টি সবচেয়ে কম প্রসেস করা হয় তাই এতে উপকারি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান অনেক বেশি আর ব্ল্যাক টি র চেয়ে ক্যাফেইন অনেক কম। ওলং টা গ্রীন আর ব্ল্যাক টি এর মাঝামাঝি। সেটা নিয়ে আলাদা পোস্ট করবো। আজকে কথা বলবো বিভিন্ন রকমের গ্রীন টি নিয়ে।
1.Long Jing যেটা Dragonwell Green Tea নামেও পরিচিত। এটি চাইনার চা এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রীন টির মধ্যে একটা।
2. Japanese Sencha- এটি জাপানের রেগুলার গ্রীন টি এবং জাপানে ধুমায়ে খাওয়া হয় এবং বহির্বিশ্বেও ভাল চাহিদা।
3. Matcha– এটি পাউডার জাপানিজ গ্রীন টি। এটি জাপানের চা উৎসবে খুব ইউজ হয়। ম্যাচা গুড়া বিভিন্ন খাবার, ডেজার্ট এ ব্যাবহার করা হয়। আইসক্রীম ও বানানো হয়। আমি দু তিনবার ম্যাচার ছবি পোস্ট দিসি গ্রুপে। সবাই জিজ্ঞেস করছে এত সবুজ কেন।
4.Genmai Cha যা পপকর্ন চা নামেও পরিচিত।এটা আসলে Sencha যা প্যানে ভাজা হয় সাথে ব্রাউন রাইস মিক্স থাকে মানে চালভাজা 😂
আপনি নিচের লিংকে গিয়ে চায়না, জাপানের সব গ্রিন টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
http://teadiscussion.com/types/green-tea-types.php
এত রকমের গ্রীন টি দেখে মাথা ঘুরাচ্ছে তো। কোনটা বেস্ট? আসলে সবগুলোই ভাল। এটা জেনে রাখা ভাল যে উচ্চমানের গ্রীন টির মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হয় না। যদি কোন গ্রীন টি খুব বাজে টেস্ট হয় তাহলে বুঝতে হবে খুব ফ্রেশ না। পাউডার গ্রীন টিন বা লুজ গ্রীন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমান বেশি থাকে টি ব্যাগের তুলনায়। লুজ চা তে গোটা পাতা থাকে, এবং বড় বড় পাতার টুকরা থাকে এবং ফ্রেশ আর স্টোরেজ লাইফ কম। অন্যদিকে টি ব্যাগে ছোট ছোট চা পাতার টুকরা থাকে, যা খুব জলদি লিকার ছাড়ে তবে স্বাদ এবং স্বাস্থ্যকর উপাদান কম থাকে। টি ব্যাগ অনেক দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায় তাই এটাকে খুব ফ্রেশ বলা চলেনা এবং স্বাস্থ্যকর উপাদান কম। তবে কিছু বেনিফিট তো অাছেই। লুজ টা সম্ভব না হলে এটাতেই কাজ চালাতে হবে।
তাহলে কোন চাইনিজ বা জাপানিজ গ্রীন টি কিনবেন? এটা আপনার নিজের স্বাদের উপর নির্ভর করে। তাই সবগুলা একটু করে টেস্ট করবেন যেটা ভাল লাগবে সেটা কনটিনিও।
এখন কেন আপনি রোজ গ্রীন টি খাবেন? আর উপকারিতা কি?
গ্রীন টি তে আছে Epigallocatechin Gallate সংক্ষেপে EGCG. এটি গ্রীন টির একটি এন্টি-অক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন প্রকারের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে, বিশেষ করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। এটি একটি ন্যাচরাল মেডিসিন।
১.গ্রীন সুপার ফ্যাট ফাইটার এবং ওজন কমাতে সহয়তা করে। এর EGCG বডির ফ্যাট বার্নিং এর হার বাড়িয়ে দেয়। বডির মেটাবলিক রেট বাড়ানোর জন্য এক্সপার্টরা দিনে মিনিমাম তিন কাপ রেকমেন্ড করে। যেনে রাখা ভাল, গ্রীন টি মেটাবলিজম রেট মাত্র ৪% বাড়ায় যা দিনে ৮০ ক্যালরি বার্ন করে। তাই শুধু মাত্র গ্রিন টি খেলেই ওজন কমবে না, ওজন কমানো, রেগুলার এক্সারসাইজ আর হেলদি ডায়েটের উপর নির্ভরশীল। আর গ্রিন টি হেলদি ওয়েট মেইন্টেনে সহায়তা করে সাথে অল্প হলেও তো কিছু ক্যালরি বার্ন করছে।
২.দ্বিতীয় উপকারিতা শুনে খুশি হবেন। তা হল গ্রীন টি ভুড়ি কমাতে সাহায্য করে 😂 গ্রিন টি তে থাকা EGCG পেটে ফ্যাট বার্নিং জিন একটিভেট করে যা ওয়েট লুজের হার ৭৭% বাড়ায়। তাই ভুড়ি কমাতে রেগুলার গ্রীন টি খাইতে হবে।
৩. গ্রীন টি পেটের সমস্যা দুর করে এবং হজমে সাহায্য করে। তাই কখন হঠাৎ বেশি খেয়ে অসস্থি লাগলে গ্রিন টি খেতে পারেন।
৪.আরেকটা কারন হল গ্রীন টি তে থাকা থিয়ানাইন এবং এমিনো এসিড আপনাকে রিল্যক্স এবং ফোকাস থাকতে সহায়তা করে এবং গ্রীন টি স্ট্রেস কমায়। তাই যখন দুঃচিন্তাগ্রস্ত থাকবেন তখন এককাপ গ্রীন টি খাবেন, এটি আপনাকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে।
৫. পঞ্চম কারন হল গ্রীন টি আমাদের ব্লাড সুগার লেভেল ব্যালান্স করে আমাদের এনার্জি স্ট্যাবল রাখতে সাহায্য করে। এটি ব্লাড সুগার বাড়তে বা কমতে বাধা দেয়। যার ফলে বিরক্তি ভাব কমে এবং গ্রীন টি ক্ষুধা কমায়। গ্রিন টি পানকারিদের ক্ষুধার উপর কন্ট্রোল থাকে যা বেশি না খেতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি সেসব মানুষগুলোর একজন হয়ে থাকেন যাদের পেট ভর্তি থাকার পরও ক্ষুধা থাকে বা খাবাবের প্রতি চাহিদা থাকে। তারা রেগুলার গ্রীন টি খাওয়া শুরু করেন আপনার রেগুলার মিলের পাশাপাশি।
৬. রেগুলার গ্রীন টি আপনার আয়ু বাড়াবে এবং আপনাকে ইয়াং দেখাবে। গ্রীন টি তে থাকা EGCG ভিটামিন E এর থেকে ২০০% বেশি কার্যকর স্কিন ড্যামেজ করা সেল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে। যাইহোক কথা হল রেগুলার বেসিসে গ্রিন টি খেলে স্কিন ড্যামেজ, রিংকেল এবং চেহারা থেকে বয়সের ছাপ কমায়। আর এশিয়ানদের (চায়না, জাপান, কোরিয়া) ঝকঝকে তকতকে চেহরার রহস্য হইলো তাদের রেগুলার গ্রীন টি খাবার অভ্যাস। চিরসবুজ থাকতে হইলে সবুজ চা খাইতে হবে।
৭.আপনি হয়তো জানেন না গ্রিন টি দাতের জন্য ভাল এবং এটি মুখের গন্ধ দুর করে। যেখানে কফির কারনে মুখে গন্ধ হয় সেখানে গ্রীন টি তার পুরা বিপরীত। গ্রীন টি তে প্রাপ্ত এন্টিব্যাকটেরিয়া এবং ন্যাচরাল ফ্লোরাইড সেসব ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে যার ফলে ক্যাভিটি, মাড়ির সমস্যা এবং মুখের গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই আপনি আপনার কফিকে রিপ্লেস করে গ্রীন টি খেতে পারেন।
৮. গ্রীন টি ক্যান্সারের ঝুকি কমায়। অনিয়ন্ত্রিত সেল বৃদ্ধির কারনে ক্যান্সার হয়ে থাকে। EGCG ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
৯. গ্রীন টি রক্তে খারাপ কোলেস্ট্রল (LDL) কমায় এবং ভাল কোলেস্ট্রল (HDL) বৃদ্ধি করে।এর ফলে এটি Cardiovascular Disease হতে দেয় না। যা এখন আমেরিকাতে মৃত্যুর প্রধান কারন।
তো এখন যেহেতু গ্রিন টি এর বেনিফিট গুলো জেনে গেলেন। তো সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে সারাদিনে কত কাপ খাওয়া উচিত?
এটা নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে। কারও মতে ২ কাপ, কেউ ৫ কাপ কেউবা ১০ কাপ পর্যন্ত বলসে। তবে ৩-৫ কাপ খাওয়া সেফ। এবং হ্যা গ্রীন টি তে ক্যাফেইন আছে যা কফির তুলনায় অনেক কম। এক কাপ গ্রীন টি তে ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে যেখানে কফিতে ১০০-২০০ মিলিগ্রামের মত ক্যাফেইন থাকে। কারও যদি ক্যাফেইনে সমস্যা থাকে তবে সে দিনে এককাপ খেতে পারে।
তো কিভাবে গ্রীন টি বানালে ম্যাক্সিমাম ফ্লেভার পাওয়া যাবে। পানি ফুটিয়ে চুলা অফ করবেন। তারপর ১ কাপ পরিমান পানিতে ১ চা চামচ গ্রীন টি দিয়ে ২-৩ মিনিট লিকার ছড়াতে সময় দিন। তারপর ছেকে খেয়ে ফেলুন। যদি আপনি গ্রিন টি ফুটান তবে এটা তিতা হবে আরও।গ্রিন টি আপনি ঠান্ডা গরম দু অবস্থা তে খাইতে পারবেন। আপনি ফ্লেভার দিতে চাইলে লেবু চিপে দিতে পারেন বা আদা। তবে যাই করেন গ্রীন টি তে দুধ মেশাবেন না। দুধ গ্রীন টি এর উপকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং এটা যথেষ্ঠ অদ্ভুত ব্যাপার। যদি সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে চান তবে গ্রিন টি তে কোন আর্টিফিশিয়াল সুইটনার বা চিনি মেশাবেন না। গ্রীন টি এমনিতেই হেলদি সাথে কিছু মিক্স করার দরকার নাই। আর বড় কথা হল গ্রীন টিতে কোন ক্যালরি নাই।
শেষ কথা হল, গ্রিন টি আপনি শুরু করলে তারপর কয়েক মাস খেয়ে ছেড়ে দিবেন এমন যেন না হয়। গ্রিন টি থেকে ম্যাক্সিমাম হেলথ বেনফিট পাবার জন্য রেগুলার গ্রিন টি খেতে হবে।
Written By
Sajedur Rahman
ISSA Certified Fitness Nutrition Specialist