১২ সপ্তাহের প্রিমিয়াম মেনটরশীপ রিভিউ
মেনটর – Sajedur Rahman
ওজন হ্রাসঃ ১০.০৫ কেজি (২২.১ পাউন্ড)
কোমরের সাইজ কমেছেঃ ৪.৫’’
উচ্চতা – ৫’৪’’
ওজন কমানো পৃথিবীর দুঃসাধ্য কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। এই মাঠে যারা নেমেছেন শুধু মাত্র তারাই বলতে পারবেন কতটা শ্রম আর আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন ওজন কমাতে। আমার ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অনেকদিন ধরেই। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। পরিকল্পনাবিহীন শরীরচর্চা করে যেমন কোন ফল পাচ্ছিলাম না, তেমনই ধৈর্য নিয়ে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় নি। বারবার হতাশ হয়ে ছেড়ে দিতাম আবার কিছুদিন পর পুনরায় শুরু করতাম। গত বছর আমার শহরের একটা জিমে ভর্তি হয়েছিলাম অনেক আশা নিয়ে, পেশাদার প্রশিক্ষকও নিয়েছিলাম। কিন্তু আমেরিকান খাদ্য বিবেচনায় যে খাদ্যতালিকা দেওয়া হয়েছিলো তাতে বেশিদিন সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। দেশের কোন মেনটরের সাথে কাজ করার ইচ্ছে আগে থেকেই ছিলো। গত বছরের শেষে কেউ একজন যোগ করে দিলো ‘লুজ টু গেইন’ গ্রুপে। সেখান থেকেই জানতে পারলাম সাজিদ ভাইয়ের নাম।
শেষ কয়েক বছরে কখনো নিয়মিত কখনো অনিয়মিত শরীরচর্চা করেও ফল না পাওয়ার কারণ ছিলো ডায়েট নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জোর না দেওয়া। গত বছর বাজারে প্রচলিত কিছু ডায়েট চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেগুলি বেশিদিন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিক খাবারগুলি বর্জন করে চলায় সারাক্ষণ মন খারাপ থাকতো। নিজেকে কেমন বঞ্চিত বঞ্চিত মনে হতো। দেখা যেতো কয়েকদিন ডায়েট করে সপ্তাহান্তে এসে ভারী খাবার খেয়ে ফেলেছি। সাজিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর জানতে পারলাম স্বাভাবিক সব খাবার রেখেই ডায়েট লিস্ট করা সম্ভব। প্রোগ্রামের শুরুতে সার্ভে করে আমি কি ধরণের খাবার খেতে চাই আর কয়বেলা খেতে চাই সব জেনে নিলেন উনি। আমার টার্গেট আর পছন্দের খাবারের সাথে মিল রেখেই করে দিলেন ১৫০০ ক্যালরি লিমিটের মডারেট কার্ব ডায়েট। এইবার আর নিজেকে বঞ্চিত মনে হয় নি। খেতে পেরেছি পছন্দের ভাত, মাছ, মুরগি, খিচুড়ি সবই। শুধু মাত্র মেপে মেপে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেতে হয়েছে। কোন বেলায় হিসেবের বেশি খেয়ে ফেললে পরের বেলায় ক্যালরি হিসেব করে ১৫০০ ক্যালরি লিমিটের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতাম। আর সাথে সপ্তাহে ৫-৬ দিন Orange Theory Fitness এ যাওয়া শুরু করলাম এক ছোট ভাইয়ের পরামর্শে। এই জিমে প্রতিদিন কোচের অধীনে ঘন্টাব্যাপী High Intensity Interval Training (HIIT) এর গ্রুপ ক্লাস করতাম। এই জিমের শরীরচর্চা প্ল্যান এমন যে গেলেই প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৮০০ ক্যালরি বার্ণ হতো। এই জিম এবং এখানকার শরীরচর্চা নিয়ে আরেকটা লিখা লিখবো। শুধু এটা বলতে পারি ওজন কমানোর জন্য আমেরিকায় এটা সবচেয়ে ভালো জিম। বিশেষ করে যারা আমার মতো নিজের উপর খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ নেই।
তবে শরীরচর্চার চেয়েও ডায়েট নিয়ন্ত্রণই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। বলা হয়ে থাকে ওজন কমানোর ৮০ শতাংশই নির্ভর করে ডায়েটের উপর। আপনি ৫০০ ক্যালরি পুড়িয়ে এসে ১০ মিনিটেই তার চেয়ে বেশি ক্যালরি নিয়ে নিতে পারেন ডায়েটের যত্ন না নিতে জানলে। আর যত্ন নিয়ে সে ডায়েট চার্ট তৈরির জন্য হয় এই বিষয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে আপনাকে, নয়তো দ্বারস্ত হবেন কোন পেশাদার মেন্টরের। আমি কৃতজ্ঞ যে দেরিতে হলেও সাজিদ ভাইয়ের মতো মেনটরের খোঁজ পেয়েছি। উনার দেওয়া ডায়েট অনুসরণ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় নি কখনো। তাছাড়া যেকোন প্রশ্ন মনে আসলে বা বিশেষ কিছু খেতে চাইলে উনার পরামর্শ নিতাম। এমন না যে সবসময় ডায়েটের শতভাগ মেনে চলতে পেরেছি। প্রায়ই সপ্তাহান্তে প্রিয় খাবার বিরিয়ানি আর সিংগারা খেয়ে ফেলতাম রুমমেটের সাথে। মাঝে মাঝে দাওয়াতে গেলে ডায়েট সীমার মধ্যে খাওয়া সম্ভব হতো না। তদুপরি রোজার শেষের দিক আর ঈদের সময়ে দুই সপ্তাহ ভারী খাবার থেকে নিজেকে বিরত করতে পারি নি। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হয়তো আরো বেশি কমতো ওজন। তবে প্রিয় খাবার বর্জন না করেই ১২ সপ্তাহে ১০ কেজি কমাতে পারাও আমার কাছে অনেক বড় সফলতা। জীবনে এই প্রথম টানা তিনমাস লেগে থাকতে পেরেছি। এবং সেটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র মেনটরের কাছে জবাবদিহিতার ব্যাপার থাকায়। এখানেই শেষ নয়, যেতে হবে আরো অনেক দূর। আপাতত এক মাসের বিরতি নিয়ে আবারো শুরু করবো সাজিদ ভাইয়ের সাথে ১২ সপ্তাহের প্রোগ্রাম। দেশে এই ধরণের প্রোগ্রাম চালু করায় সাজিদ ভাই সহ লুজ টু গেইনে উনার সকল সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।