যদিও আমার বিফোর - আফটার ছবির পর আর কোন কিছুই বলার প্রয়োজন হয় না। তারপরও বলতেই হয়, আমার এই ট্রান্সফরমেসনের পুরো কৃতিত্ব আমার মেনটর ‘খান এহসান জিয়ন’ এর। যার সঠিক গাইডলাইনের কারনেই আমার পক্ষে এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই ওভার ওয়েট ছিলাম। কখনোই এসব কিছু কেয়ার করিনি, বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওয়েটও বাড়তে থাকে… কিন্তু কোন মেডিকেল ইস্যু ছিল না বিধায় ওয়েট কমানোর বিষয়ে সিরিয়াস হইনি।
ঘটনার শুরু ২০২১ এর জানুয়ারিতে, আমি সহ আমার ফুল ফেমিলির একটি রোড এক্সিডেন্টের পর আমার জীবন পালটে যায়। ভাগ্যক্রমে সবাই প্রাণে বেঁচে গেলেও, আমার তিন তিনটি অপারেশনের পরপরই শুরু হয় মানসিক অশান্তি, বুক ধরফর করতো, পুরো শরীরে অস্বস্তি লাগতো, রাতে ঘুমাতে পারতাম না। আমার এই অবস্থা দেখে আমার হাসবেন্ড মে মাসে আমার একটি ফুলবডি চেক-আপ করিয়ে দেন। রিপোর্ট দেখে তো আমি বিশাল একটি ধাক্কা খাই। কারন রিপোর্টে ব্লাড সুগার আসে ২৭, সাথে হাই কোলেস্টরল এবং থাইরয়েড প্রবলেম। ডাক্তার তিন বেলা ইন্সুলিন এবং লাল, নিল, হলুদ, সবুজ সব রঙের ওষুধ দিয়ে দিলেন। জোড় দিয়ে একটা কথাই বললেন, “বাঁচতে চাইলে ওয়েট কমান”। কিছুদিন ডিপ্রেসড থাকার পর একজন ডায়েটিসিয়ানের পরামর্শ নিয়ে এগুলাম কোমর বেঁধে। কিন্তু, সপ্তাহ খানিক যেতে না যেতেই হাল ছেড়ে দিলাম। ১৫ দিন পর ডাক্তারের কাছে গেলাম। সুগার কন্ট্রোলে আসলেও ওয়েট বেড়েছে আরও এক কেজি। এবার ইন্সুলিন বন্ধ করে ডাক্তার ২ বেলা ওষুধ খেতে দিলেন। এবং ৩ মাসে ১০ কেজি ওয়েট কমিয়ে যেতে বললেন। গ্রুপে নিরব দর্শক ছিলাম অনেক আগে থেকেই, মেনটরশিপ প্রোগ্রামের কথা মাথায় আসলো। যেই ভাবা সেই কাজ, পেজে নক দিলাম… কয়েক জন মেনটরের ডিটেইল পাঠালো। কেনো জানি ‘খান এহসান জিয়ন’ এর প্রোফাইল দেখে মনে হলো উনি অন্যদের চাইতে ফেক্সিবল হবেন। যদিও এই নাম আমার কাছে ছিল অপরিচিত তবুও মনে দিধা দন্ড নিয়ে নাম্বার নিলাম। প্রথম বার কথা বলেই, আমি পুরো ফ্যান হয়ে গেলাম ওনার।
নিজের উপর কনফিডেন্স ছিলো না একেবারেই। জানতাম, আমার দ্বারা কিছুই হবে না। এটাও ভাবলাম, আমারতো হারাবার মতো আর কিছু নেই… চেস্টা করেই দেখি না, যদি একটু সুস্থ থাকা যায়। তাই ফেমেলিতে কাউকে কিছু না জানিয়ে এনরল করলাম ১২ সপ্তাহের প্রোগ্রামে। যা ভাবেছিলাম তাই হলো… এক সপ্তাহ ঠিক মতো মেইনটেইন করার পর ঢিলেমি দিতে শুরু করলাম। তারপরও আমার মেনটর আমাক মোটিভেট করতেন, সাহস বাড়িয়ে দিতেন, পরামর্শ দিতেন, কিন্তু কখনোই কোন রকম চাপ দেননি। মাত্র এক মাসেই আমার ট্রান্সফরমেশন হলো চোখে পরার মতো!
Believe it or not… উনি যা বলেছেন তার শুধু মাত্র ৫০% মানতে পেরেছি, কিন্তু আমার ইম্প্রুভমেন্ট হয়েছে এক্সপেকটেশন এর চাইতে ১০ গুন বেশি।
তখনও জানতাম না যে ফ্যাট লস আর ওয়েট লস এক নয়। বিশ্বাসই করতাম না যে ২ বেলা ভাত খেয়েও মানুষ শুকাতে পারে। আশে পাশের মানুষেরা আমার পরিবর্তন দেখে অবাক হতে থাকলো। সেটা বুঝতে পেরে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকলো, আর আমার বডি মেজারমেনট কমতে থাকলো…. ৩ মাস পর ডাক্তার আমার রিপোর্ট দেখে হতবাক। আমাকেই জিজ্ঞেশ করলেন, এতো কনট্রলে আসলেন কিভাবে? ওয়েট কমেছে ১০ কজির বেশি, ব্লাড সুগার এসেছে ৬.৬, আর কলেস্টেরল নেমে এসেছে হাফ এ। ওষুধ একে বারেই কমিয়ে দিলেন, আর এভারেই মেনে চলতে বললেন। তাই আবারো ৩ মাসের প্রোগ্রামে এনরোল করলাম। আমার মেনটরের মতে, এখনও আরো আরেকটা ট্রান্সফরম করার সুযোগ আছে আমার। তাই, উনার উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করে এগিয়ে যাচ্ছি নতুন লক্ষ্যের দিকে…..