#ট্রান্সফর্মেশনস্টোরি
আসসালামু আলাইকুম।
১২সপ্তাহের প্রিমিয়াম মেন্টরশিপ।
টোটাল ওয়েট লস: ২১কেজি
পূর্ব ওজন: ১৩৪কেজি
বর্তমান ওজন: ১১৩ কেজি
মেন্টর: খান এহসান
মেন্টরশীপ যখন নেই তখন ওয়েট ছিল ১২৫ কেজি( ফেব্রুয়ারী), মেন্টর শীপ শেষ হয় মার্চে তখন ওয়েট ১১৭ কেজি। মোট ওয়েট লস ৮কেজি।
লুজ টু গেইনে আছি একদম শুরুর দিন থেকে।গ্রুপ মেম্বারদের ট্রান্সফরমেশন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ওজন কমাতে চেষ্টা করেছি অনেকবার কিন্ত ঝামেলা হল আমি যখন জোরেশোরে কিছু শুরু করতে জাই তখনই সবচেয়ে বেশি আটকে জাই।৩/৪ কেজি কমায় আনা আমার জন্য কোন ঘটনা না, আর জতটুকুই কমে সবার আগে ছাপ পড়ে মুখে সবাই ভাল্লাগতেছে ভাল্লাগতেছে বলে একদম মাথায় তুলে ফেলে আর আমাকে পায় কে টাইপ অবস্থা হয়!!!!এই সমস্যা গুলা নিয়ে আমি আস্তে আস্তে সর্বোচ্চ ওজনে চলে গেলাম সেই সাথে চরম ফ্রাস্ট্রেটেড।এই খানে একটু বলে রাখি আমার ফ্যামিলিতে কেউ হাল্কা পাতলা দুবলা না,সবাই কম বেশি ওভার ওয়েট,এদের মধ্যে আমি হলাম হায়েস্ট।ওজন বাড়ানো আর ইচ্ছামত খেয়ে নেয়াকে আমি শিল্পের পর্জায়ে নিয়ে গেছি। ইউটিউবে /ফেসবুকে তখন বিশেষ একটা ডায়েট প্লান সবার মুখে মুখে ঘুরতেছিল, আম্মার চাপে পড়ে আমাকে সেটাই শুরু করতে হল।কিন্ত এই লুজ টু গেইনের এতো বছর এর শিক্ষা আমার মাথায় ছিল বিএমআর, ক্যালরী ডেফিসিট।অফিসের কাজের চাপ, আম্মার ঝাড়ি, যাতায়াতের হ্যাসেল নিয়ে আমি মোটামুটি নাস্তানাবুদ সেই সময় “মুশকিল আসান” হিসেবে এহসানভাই এর একটা পোস্ট দেখে ভাইকে নক দিয়ে বলি আমাকে একটু হেল্প করেন আমি আবোলতাবোল ডায়েট করতে চাইনা।কখনো ভাবিনি আমি আমিনা ফাতেমা ইকবাল কখনো নিজের সম্পর্কে এইভাবে লিখতে পারব আর গ্রুপে শেয়ার করার মত কিছু লিখতে পারবো।
পাচমাস নিজেকে কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম আর সেই চ্যালেঞ্জ এর রেজাল্ট হল ২১কেজি কমায়ে নিয়ে আসা(জানুয়ারী - মে)। জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে ছিলাম ১৩৪ কেজি এখন সেটা ১১৩কেজি। টাণা দুইমাস কিটো ডায়েট+ মডারেট টাইপ এর এক্সেরসাইজ এর কম্বিনেশন ছিল আমার এই জার্নি। কি করেছি কি করিনি আর কি কি করার সুজোগ ছিল কি কি করব এইগুলা লিখছি এক এক করে।
সবার আগে নিজেকে কন্ট্রোল করেছি, ক্ষিদায় মরে গেলেও নিজের চার্ট এর বাইরে কিছুই খাইনি, আমার জন্য এক্সেরসাইজ করা ডিফিকাল্ট ছিল ( মোটামানুষ নড়াচড়া করা কঠিন)আমি সবচেয়ে বেশি ফোকাসড থাকতাম কি খাচ্ছি তার উপর।হাটার সুজোগ কম ছিল জতটুকু পেরেছি ছাদে হেটেছি।।অফিসের ব্রেকে একদিন কফির ছবি স্টোরিতে দিয়ে মেন্টর ভাইয়ার ঝাড়ি খেয়ে শুধরে নিয়ে ছিলাম নিজেকে( সেই প্রথম সেই শেষ) । নিজের বাসা ছাড়া অন্যকোন খানে গেলে ডিম ভাজা খেয়ে থেকে গেছি। “একদিন খেলে কিছুই হবেনা " এই কথা কানেও তুলিনি।ক্ষতি জা হবার তার জন্য একদিন এনাফ না একবেলা এনাফ। দাওয়াত /পিক নিক ছিল, মোরগপোলাও ঝেড়ে ঝেড়ে জাস্ট চিকেন খেয়ে উঠে গেছি। আমি ওয়ার্কিং ওমেন নিজের সারাদিন এর খাবার সাথে করে নিয়ে ঘুরেছি।এই দুইমাসে কেবল একদিন কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে হয়েছিল এভোয়েড করতে পারিনি।এন্ড দ্যাটস দা অনলি চিট মিল।
কি কি করিনিঃ
চিট করার ১০০% সুজোগ থাকার পরেও চিট করিনি।ওয়ালেটে টাকা ছিল এনাফ চিকেন গ্রিল ১০টা খেয়ে ফেলার মত ক্ষুদা পেটে নিয়ে ১ঘন্টায় ধরে বাসায় আসার জন্য বসে ছিলাম কারন জানি আম্মা রান্না করে বসে আছে।আমার জবের নেচার উইকে তিনদিন এক রকম, বাকি তিনদিন এক রকম।দুপুরে জেদিন বের হতাম সেই তিনদিন এক ঘন্টা সময় দিতাম। আর বাকি দিন গুলাতে ২০মিনিট। দুইমাস টানা কিটো ডায়েট ফলো করে এপ্রিল মাসে ফাস্টিং + লো কার্বে সুইচ করেছি।এহসানের কড়া নজরদারীতে ১২৬ থেকে ১১৭ এ এসে থেমেছি। মেন্টর শীপ শেষ তারমানে কিন্তু এইনা আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি।এরপরে লোকার্ব আর ফাস্টিং করে গিয়েছি কারন তখন লকডাউন শুরু হয়ে গেছে, বাসায় আটকা আমি,এইবার নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এক্সেরসাইজে মন দিলাম।ফলাফল ১১৯ থেকে ১১৩।বুক ৫২ থেকে ৪৮ নেমে আসলো।জামা নিয়ে যখন টেইলর ভাইয়ার কাছে গেলাম তখন সেও দুইবার বলছে আপা কি কোন অসুখ হউছে, আপনারে ইরাম দেখা যাচ্ছে কেন!!!!????
জদি কখনো মনে হয় আমার দারা কিছু সম্ভব না, হবেনা,আর হলনা তাদের জন্য এই পোস্ট আর তাদের জন্য জন্য এতো ডিটেল করে লিখেছি।
আমি জদি পারি আপনিও পারবেন।কিটো ডায়েট করতে হবে সেটা জরুরী না।মেন্টরশীপ শেষ হলেও আমি নিজের সাথে নিজের প্রমিস ভুলতে পারিনি। রোজার মধ্যে ইফতার প্রিপারেশন করে ঠিক ইফতার এর আগের ৪৫ মিনিট হিট এক্সেরসাইজ চালায়ে গেছি।
জীবনে সবকিছু জখন স্মুদ চলতে থাকে তখন বুঝতে হয় “ধাক্কা” খুব কাছেই।মে মাসের ২১ তারিখ আম্মা বাদে ফুল ফ্যামিলি কোভিড পজেটিভ হয়ে পড়ি।জুনের ১ তারিখ নেগেটিভ হবার সাতদিনের মাথায় আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি। কি হয়েছে, ডাক্তার কি বলে এখন কি অবস্থা এই সবের কোন উত্তর আমার কাছে নাই, কারন এই প্রশ্ন গুলাত উত্তর কোন ডাক্তার আমাকে দিতে পারেনি। মোটামুটি ১২০দিন ভোগার পরে আমি এখন কিছুটা ভালোর দিকে হয়তো নেক্সট ব্লাডটেস্ট করে লোকার্ব ডায়েট শুরু করব।
ট্রান্সফর্মেশন পোস্টে নিজের এতো কথা লিখার কারন একটাই আমি জদি সেই আকাশছোয়া ওজন নিয়ে কোভিডপজেটিভ হতাম তাহলে এই ট্রান্স ফর্মেশন স্টোরি শেয়ার করার আগেই সব শেষ আইডি দেখাতো “রিমেম্বারিং”!!!!!!
আমার ওয়েট কমানোর মুল ইচ্ছা ছিল সব ধরনের শাড়ি জেন পরতে পারি, কোভিডে ভোগার পরে মনে হল কিসের শাড়ি কিসের কি সবকিছুবাদ সবার আগে সুস্থতা, আমার ভালো থাকা,আমি জদি ভালো থাকি আমার আশেপাশের সবাই ভালো থাকবে।ডায়েট শুরু করার আগে সুগার কন্ট্রোল আর হাইব্লাড প্রেশার কন্ট্রোল করার জন্য মেডিসিন নিতে হত।জানুয়ারি মাসের পর থেকে সুগার কন্ট্রোল এর মেডিসিন আর খাইনা, ঈভেন ডাক্তার যখন তিন মাসের গড় সুগার চেক করেও আমাকে মেডিসিন দিতে পারেনি ডাক্তার তার উষ্মা প্রকাশ করতে ভুলে জাননি, আপনার সুগার এতোটা কন্ট্রোলড কিভাবে????
এখন ব্লাড প্রেশারকে সম্মান দেখায় শুধু এই একটা অসুধ খাই সকালবেলা তাও সেটা রেগুলার খাইনা।
এতো লম্বা আর ডিটেল স্টোরি পড়ে মনে হতে পারে এখন কি অবস্থা আমার ? এখন কি করছেন, কি ডায়েটে আছেন? আমি এখনও রেস্টে আছি, ফুল বেডরেস্টে ছিলাম দুইমাস। সেপ্টেম্বর মাস থেকে মোটামুটি বাসার কাজকর্ম করতে পারছি।আমার জন্য কিছুটা দোয়া করবেন জেন একদম সুস্থ হয়ে যেতে পারি আর জানুয়ারি মাসে আবার ট্রান্সফর্ম করে নিজের টার্গেট রিচ করতে পারি।
এতো সময় নিয়ে আমার লেখা পড়ার জন্য থ্যাংক ইউ।আমার মেন্টর এহসানকে অনেক অনেক থ্যাংকস, কারন ওনার মত শক্ত মেন্টর আর আছে কিনা আমার জানা নাই। প্রতি উইকে দুইকেজি কমার খুশিতে আমি যখন আবেগ আপ্লূত তখন এহসান রিপ্লাই দেয় “নট এ বিগথিং আপা” ইঞ্চিতে কমেন নাই তেমন!!!
আমার আবেগ শেষ!!!!! ট্রাস্ট মি ওনার এই একটা কথা আমার ভিতরে প্রচন্ড জেদ তুলে দিত।আমার এক্সেরসাইজ চার্ট এর কোন গুলা করতে পারছি, কতগুলা করতে পারি সেটা আমার দেখাতে হত।আমার বাম হাতে একটা ইনজুরি আছে, আমি বামহাতে ভারী কিছু তুলতে পারতাম না, এহসানের কথাতে এখন দুইকেজি ওয়েট নিয়ে ডাম্বেল প্রেস ২০০বার তখন আর কোন ব্যাপার না।
মেন্টর শীপ ওভার হয়ে গেলেও আমি লোকার্ব+ ফাস্টিং ডায়েট চালায়ে গেছি রোজার আগের দিন পর্জন্ত।
আপনি যখন কিটো করবেন তখন অনেকে অনেক রকম কথা বলবে ডায়েট নিয়ে কিটো নিয়ে।কিন্ত দিন শেষ করে, মাস শেষ করে তারাই এসে বলবে “কিভাবে কি করছ বল “এটাই হল আপনার এচিভমেন্ট। কিটো ডায়েট ফলো করা আর সেটাকে মেইনটেইন করার জন্য জথেস্ট নলেজ রাখা প্র য়োজন, আমার জন্য সহজ ছিল কারন আমার সাথে মেন্টর ছিল।পাচমাসে আমি এই ২১কেজি কমায় বুঝলাম আমার দারা ওজন কমানো সম্ভব।
আমিও পারব আমার টার্গেট এচিভ করতে।
ডায়েট এর শুরুতে জানতাম না জে এই রকম চেঞ্জ করতে পারব নিজেকে তাই ১৩৪কেজির কোন সিংগেল ছবি নাই, ১১৯ কেজি( এপ্রিল মাসে) জখন হলাম তখন ছবি তুলে দেয়ার লোক নাই, তাই নিজের ছবি নিজেই তুলে রেখেছি। আমার ছবি দেখে জদি চেঞ্জ বুঝা না জায় তাই ওয়েট মেশিনের ছবি তুলে রেখেছি সেটা শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে ।১১৩কেজি যখন আমার ওয়েট ততোদিনে আমি কোভিড নিয়ে ভোগা শুরু করে দিয়েছি।
অনেক কথা লিখে ফেলেছি বিরক্ত হলে সরি।যারা আজকে কে না কালকে, হ্যান ত্যান বলে দেরি করছেন তাদের জন্য এটা একটা লেসন মনে রাখবেন ওয়েট বাড়ে খুব দ্রুত কমানো খুব স্লো প্রসেস।ওভার ওয়েট আপনার লাইফে কোন ভ্যালু এড করবেনা। জীবনের পড়াশোনা, সামাজিক স্ট্যাটাস টাকা পয়সা সবকিছু “আমি ওভার ওয়েট, আমি মোটা” এই কথার তলে চাপা দিয়ে দিবেন না।
ফিট গাইড পড়েন, নিজের বডিকে বুঝেন আর নেমে পড়েন নিজের ট্রান্সফর্মেশনে
শুভকামনা গ্রুপের সমস্ত ফ্রাস্ট্রেটেড মানুষ গুলার জন্য।এতো বড় পোস্ট পড়েও জদি মনে হয় কিভাবে কি করলেন,আর ইনবক্স ভারী করেন আমার তাহলে আমি বলবো আমি ইনবক্স পরিচিতলোক ছাড়া আর কারোটা দেখিনা।
লুজ টু গেইনের সব মেন্টর / ফাউন্ডার এডমিন/ ভলান্টিয়ার দের আমার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
উইথ লাভ ফ্রম লিজ